ডাঃ কাফিল খান সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন তাঁর ‘দ্য গোরখপুর হসপিটাল ট্র্যাজেডি’ বইটির বাংলা অনুবাদ “গোরখপুর হসপিটাল ট্র্যাজেডি – এক চিকিৎসকের কলমে ভয়াবহ বিপর্যয়ের স্মৃতিলিখন”-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে। তার মাঝেই তিনি বন্যা কবলিত মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকে করেছেন হেলথ ক্যাম্প। যেভাবে একটি স্কুলের হলরুমে প্রায় ৯০ জন মানুষ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, তা দেখে তাঁর মনে পড়েছে নিজের জেল জীবনে ছোট্ট কুঠুরিতে বন্দীদের গাদাগাদি করে থাকার স্মৃতি। হতাশ হয়েছেন দেখে যে বন্যার সঙ্গে যে হাজারো সংক্রামক ও অ-সাংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে তা সামলানোর যথাযথ ব্যবস্থা নেই। সুদর্শনা চক্রবর্তী-র সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সরকারি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পেছনে দুর্নীতির কথা। বললেন তাঁকেও বলা হয়েছিল, “সরকার বহোত বড়া হ্যায় আপ কেয়া কর পাওগে?” কিন্তু তাঁর লড়াই থামেনি।
জিএক্স: ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনের পর প্রথম আপনার সঙ্গে কথা হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল, উত্তরপ্রদেশের ফলাফল জানার পর আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন যখন নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর মাস চারেক কেটে গেছে, কী মনে হচ্ছে আপনার?
ডাঃ কাফিল খান: সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল তো ভাল ছিল। আমরা ঠিক এতটাও আশা করিনি। আমার হিসাব ছিল ২৫০ থেকে ২৬০। সেরকমই মোটামোটি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আশা ছিল। আর বাস্তবে যখন সত্যিই সেরকম হল, আমরা সবাই খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি সুন্দর মুহূর্ত ছিল। এখন অন্তত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কিছু আইন প্রত্যাহার করতে হয়েছে, যেগুলি দেশের জন্য ভালো ছিল না। কাওকে একটা থাকতে হবে যে চোখে আঙুল দিয়ে ভুল সিদ্ধান্তগুলি দেখিয়ে দিতে পারবে। সেটা এখন হচ্ছে।
কিন্তু আপনি যদি আমাকে উত্তরপ্রদেশের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞেস করেন, অনেকেই আমার কাছে জানতে চান যোগী আদিত্যনাথ কি দুর্বল হয়ে গেছেন? আমি বলব – এখন তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। সত্যি যে ৮০টি আসনের মধ্যে ৪০টি তাঁরা বিরোধীদের কাছে হেরেছেন, এখন উত্তরপ্রদেশের সাধারণ মানুষও এগিয়ে এসে সরকারের সমালোচনা করছেন, বলছেন – “আমরা শুধু রাম মন্দির চাই না। আমরা খাদ্য চাই, আমরা রোজগার চাই, আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য চাই।” তবে সেই একটা প্রবাদ আছে না, যে যখন রাজা দুর্বল হয়ে পড়েন তখন সেনাপতি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। উত্তরপ্রদেশে এখন সেটাই হয়েছে।
আমি মনে করি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। কেন্দ্র সরকার কিছু দিন আগে তাঁকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
জিএক্স: দু’বছর আগে গ্রাউন্ডজিরো-কে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, নির্বাচনী ফলাফল যাইহোক না কেন, আপনার ন্যায়ের জন্য লড়াই চলবেই। সেই লড়াইকে এখন আপনি কীভাবে দেখছেন?
ডাঃ কাফিল খান: এখন প্রায় ৮ বছর হয়ে গেছে আমি ন্যায়ের জন্য লড়ছি। শুধু আমার একার জন্য নয়, সেই রাত্রে যাঁরা নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাঁদের সকলের জন্য আমি এই লড়াই চালিয়ে যাব। বিআরডি অক্সিজেন ট্র্যাজেডির পর আমি যখন সারা ভারতে ঘুরতে শুরু করলাম আমি বুঝতে পারলাম যে বিআরডি অক্সিজেন ট্র্যাজেডি হল আমাদের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মুখ। কোভিডের সময়ে আমরা তো দেখলাম আমাদের স্বাস্থ্যের পুরো ব্যবস্থাটায় সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার সীমানায় পৌঁছেছিল। শুধু বিআরডি অক্সিজেন ট্র্যাজেডি নয়, আমি হেল্থ ফর অল ক্যাম্পেইন করতে শুরু করলাম। আমার এই কাজের উদ্দেশ্য হল যাতে সরকার দায়িত্ব নেয়, ভারতের প্রত্যেক নাগরিক, তাঁদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ, প্রতিবন্ধকতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও লিঙ্গ পরিচিতি নির্বিশেষে তাঁদের বাসস্থানের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সেরা স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিশেষত জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা পান সেই ব্যবস্থা করার।
আমার বই লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল সবাই যাতে আসল কাহিনীটা জানতে পারেন। আমি খুশি হয়েছে যে ‘জওয়ান’ সিনেমাতে এই ঘটনাটি দেখানো হয়েছে, বই থেকে তাঁরা ছ’টি চ্যাপ্টার নিয়েছেন। এর ফলে ঘটনাটা আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছেছে। মানুষের জানা উচিত পুরো সিস্টেমটা কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। আমি একজন ডাক্তার। কিনতু আমি জানি আমাদের কাজের ক্ষেত্রেও কত পচা মাছ (দুর্নীতিগ্রস্তের প্রতীক অর্থে ব্যবহৃত) রয়েছে।
জিএক্স: পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে জনস্থাস্থ্য পরিকাঠামোর অভ্যন্তরীণ যে গলদ সেগুলি একটু সংক্ষেপে বলুন।